December 22, 2024, 9:44 am
আব্দুল আলীম, দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নে গত রবিবার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পানবরজ পুড়ে ছাই হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পান কৃষকদের মাঝে রমজানের সামগ্রী ও ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার এ বিতরণ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ।
উপহার হিসেবে প্রায় ৫শ কৃষকের মাঝে ২ হাজার টাকা, শাড়ী, লুঙ্গী, ছুলা, মুড়ি, সিমাই, চিনি, চাল ও বস্ত্র সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এ সময় হানিফ বলেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঘুরে দাঁড়াতে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানসহ সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তালিকা করে ৮৬৬ পান চাষির মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণ কার্ড প্রদান করা হবে।
এছাড়াও যারা বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছেন সেই সব সমিতিকে আগামী ৬ মাস ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছ থেকে কিস্তি আদায়ে চাপ না দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে। আর যেইসব কৃষকরা জমি লিজ নিয়ে চাষ করেছেন সেই জমির মালিকদের লিজের টাকা না বাড়ানোর জন্যও বলে দেওয়া হলো। হানিফ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঘুরে দাঁড়াতে সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
হানিফ আরও বলেন অসাধু ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফার থেকে বিরত রাখতে সরকার ইতিমধ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে অনেকটাই কমেছে এসেছে দ্রব্যমুল্যের বাজার। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। জাতির পিতা একটি অসা¤প্রদায়িক দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ক্ষুধামুক্ত, উন্নত ও আত্মমর্যাদাশীল দেশ হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সাড়ে তিন বছরের মাথায় সোনার বাংলা গড়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা হয়েছে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সংগ্রাম করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় ফিরেছে। যে বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত ছিল আজকে সেই বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
মাহবুবউল আলম হানিফ আরো বলেন, ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টাসহ ৬টি গ্রাম একসময় এই এলাকাটি চর এলাকা ছিল। এখন রাস্তাঘাটসহ এলাকায় অনেক বাড়ি পাকা করা হয়েছে। এলাকার মানুষের উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুধামুক্ত এবং দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যা”েছন বলেই এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা ভেঙে পড়বেন না, মনোবল হারাবেন না। আপনাদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যা যা করণীয় তাই করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো। এনজিও থেকে যারা লোন নিয়েছেন আগামী ৬ মাসে কোন কিস্তির টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ না করে বিষয়টি দেখতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেন তিনি। একইসঙ্গে বিনাসুদে ঋণ প্রদান করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যেন ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারে এজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহŸান জানান।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ভেড়ামারা-মিরপুর আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম চুনু, ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান মিঠু, ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কুন্ডু, মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত আবুল কাশেম জোয়ার্দার, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ভেড়ামারা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলম জাকারিয়া টিপু ও বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন প্রমুখ।
কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন বলেন, আমাদের নেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপির পরামর্শে এবং সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। আমরা আজকে ৫০০ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী, শাড়ি, লুঙ্গি ও প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা দি”িছ। এবং আমি কথা দি”িছ আগামী ঈদের সামনে বাকি ৩৬৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে এমন সহায়তা প্রদান করব। পাশাপাশি এসব কৃষকরা যেন ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যব¯’া গ্রহণ করব ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৫হাজার পরিবারের স্বপ্নের পানের বরজ আগুনে পুড়ে ছাই। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর পানের বরজে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ক্ষতিগ্রস্তরা। তারা এই পানের বরজকে ঘিরে স্বপ্ন বুনেছিলেন। সব হারিয়ে সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ভেড়ামারার রায়টায় ৮ কি.মি. এলাকা জুড়ে ফসলি জমি, জমির ফসল, পানের বরজসহ বসত ভিটা পুড়ে ছাই হয়েছে। প্রায় ১শত কোটি টাকার উপরে ক্ষতি সাধিত হয়েছে। রোববার (১০ মার্চ) দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্ষন্ত উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পাথরঘাট এলাকা, মিটন নগর গ্রাম, আড়কান্দি গ্রাম, মাধবপুর গ্রাম, গোসাই পাড়া গ্রাম, মালিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ভেড়ামারায় এমন ভয়াবহ আগুন আগে দেখেননি এলাকাবাসী। আগুন নেভাতে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট। ৭ ঘন্টা পর রোববার সন্ধ্যার সময় ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
Leave a Reply